Snowfall With Rain In Solang Valley Manali - Himachal Pradesh
স্বর্গ এখানেই, স্বর্গ এখানেই, স্বর্গ এখানেই !
সবাই চিনে মানালি। কিন্তু মানালি এলে লোকে কোথায় বেড়ায় তা কম লোকেই জানে। সোলাং ভ্যালি হচ্ছে মানালির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গা। সোলাং ভ্যালি পরিচিত ‘দি এডভেন্চার ভ্যালি’ নামে।মানালির বর্ণনাতীত সৈন্দর্য উপভোগ করতে নিচের ভিডিওটি দেখুন।
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে যখন তাপমাত্রা চল্লিশ ডিগ্রির কোঠায় আর ঢাকায় 35-37 তখন আমি চার ডিগ্রি তাপমাত্রার শহর মানালিতে ছিলাম। কিন্তু মানালি শহরে বরফ নেই কারণ তখন শীতকাল না। হায় খোদা! চার ডিগ্রি তাপমাত্রা হওয়ার পরেও নাকি শীতকাল আসে নি এদের! কী ভয়ানক কথা!
ওল্ড মানালিতে আমার হোটেল নীলগিরির বারান্দায় বসে দূরের পাহড়ের গায়ে পেঁজা তুলোর মতন তুষারের আবরণ দেখছিলাম আগের দিন বিকেলে।
সেদিন ছিল মার্চের ২৮ তারিখ, ২০১৭।
ভোরে উঠে গিজার ছেড়ে গরম পানিতে গোসল সেরে বের হয়েছিলাম ফজরের সময়। হোটেলের পাশেই দেবদারু উদ্যান। সেখানেই ফজর পড়েছি একা একা। মানালিতে কোন মসজিদ নেই। মসজিদ বানানো নিষেধ ধর্মনিরপেক্ষ ভারতের এই শহরে। দেবদারু বনের মাঝখানে মধ্যযুগে স্থাপিত হাদিম্বা মন্দির। সেটা ঘুরে দেখে সাতটার মধ্যেই হোটেলের কাছে ফিরে নাশ্তা করলাম।
আনুমানিক নটার দিকে রওনা করেছিলাম সোলাং ভ্যালির উদ্দেশে। গুগল ঘেটে ব্লগ ঘেটে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছি আমার আগে কোন অভিযাত্রী অন্তত পায়ে হেঁটে মানালি থেকে সোলাং যায় নি। আর গেলেও সে সংক্রান্ত কোন নোট লেখে নি কেউ। বাংলাতেও না ইংরেজিতেও না। মানালি থেকে প্রায় ষোল (16) কিলোমিটার দূরের সোলাং ভ্যালির গেঁয়ো পথে রওনা দিয়েই মনে হল হায় বিদেশ বিভূঁইয়ে একা একা অজানা পথে কোথায় চলেছি! কিছুদূর হাঁটার পর দেখি মানুষ তো দূরের কথা কোন কাক পক্ষীরও দেখা নেই। নিজ শহর থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের অজ্ঞাত গাঁয়ের পথ ধরে হেঁটে চলেছি। একটু ভয় ভয় লাগছিল। অজান্তে গুনাগুন করতে লাগলাম- “নীল আকাশের নিচে আমি রাস্তা চলেছি একা”
আপেল বাগানের দিকে দেখলে মনে হয় অনেক বছর ধরে বসন্ত আসে না এদেশে। ডালপালা কেমন শুকিয়ে আছে, পাতা-পল্লবের দেখা নেই, ফুল নেই; ফল নেই। কিন্তু নিচে তাকালেই সজীব হয়ে আসে প্রাণ। হলুদ সরষে ক্ষেত বাতাসে দুলছে অবিরাম। কিন্তু আশ্চর্য সুবাস নেই কেন! কাছে গিয়ে ঘ্রাণ শুঁকলাম, নাহ! সরিষাই। চীন দেশের লোকের মত বেটে বেটে সরিষা গাছ।
বিয়াস নদীর ধার ঘেষে গাঁয়ে প্রবেশ করতেই মনে হল রবিনহুডের জগতে প্রবেশ করেছি। পাথুরে জলাধারের কিনারে পাথুরে বাড়ি ঘর। পাইন বনের আড়ালে পাহাড়ের উপত্যকায় কী সুন্দর গ্রাম। একদম সুবহানাল্লাহ!
আড়াই ঘন্টা লেগেছে সোলাং ভ্যালি পৌঁছতে। দু ঘন্টায় পৌঁছুতে পারতাম ছবি-ভিডিও এসব নিয়ে না পড়ে থাকলে।
সোলাং ভ্যালি মূলত স্নো পয়েন্ট। পর্যটকেরা বরফের বুকে খেলতে আসে বলতে গেলে। একজন আরেকজনের গায়ে বরফ ছুড়ে মারছে। আদিবাসীদের পোষাক পরে ছবি তুলছে। একটা টায়ারের ওপর বসে উঁচু থেকে পিচ্ছিল খাচ্ছে একশ টাকার বিনিময়ে। প্যারাগ্লাইডিং করতে আপনাকে গুনতে হবে সাড়ে তিন হাজার (3000) ভারতীয় রুপি। ক্যাবল কারে চড়তে খরচ পড়বে সম্ভবত (650) রুপি। স্কি করতে পারবেন তিনশ রুপিতে।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে বিমানে গেলে দিল্লি নেমে মানালির বাস পাবেন।
কলকাতা থেকে ট্রেনে যেতে পারেন দিল্লি বা চণ্ডিগড় অথবা কালকা পর্যন্ত। সেখান থেকে বাসে মানালি।
সিমলা থেকেও বাসে মানালি যেতে পারেন।
কলকাতা থেকে দিল্লি/চণ্ডিগড়/কালকা ট্রেনে 600-680 রুপি
মানালি টু দিল্লি : নরমাল বাস 600 রুপি, ভলভো 1400 রুপি
সিমলা টু মানালি: 400 রুপি
চন্ডিগড় টু মানালি: 400 রুপি
মানালি টু সোলাং ভ্যালি:
ট্যাক্সি: আঠারশ (1800) রুপি
টুরিস্ট বাস: তিনশো (300) রুপি
হিমাচল বাস: মাত্র বিশ (20) রুপি
পায়ে হেঁটে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘন্টা
No comments