ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী | Bhawal Raj Shawshaneshwari | গাজীপুরের ঐতিহাস...
ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরে অবস্থিত ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী (Bhawal Raj Shamshanswari) বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। ভাওয়াল রাজ পরিবারের এক অনন্য কীর্তি এই রাজ শ্মশানেশ্বরী। ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরীটি গাজীপুর তথা এর আশেপাশের মানুষদের জন্য ১ অন্যতম নিদর্শনীয় স্থান। ভাওয়াল রাজ পরিবারের সদস্যদের শবদাহ সৎকারের উদ্দেশ্যে ভাওয়াল রাজবাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে মৃতপ্রায় চিলাই নদীর দক্ষিণ তীরে প্রায় ৫ একর জায়গাজুড়ে ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী নামের এই সমাধিসৌধটি স্থাপন করা হয়। পরিবারের মৃত সদস্যদের নামে সৌধ নির্মাণ ও নামফলক স্থাপন করা হতো ।
শ্মশান চত্বরে মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ৬ স্তম্ভবিশিষ্ট একটি শিবমন্দির রয়েছে। এদের মধ্যে একটি স্তম্ভ সবচেয়ে উঁচু। সবচেয়ে বড় স্তম্ভটি নির্মিত হয়েছে ভাওয়াল জমিদারির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কৃষ্ণ নারায়ন রায়ের উদ্দেশে। ১৯ শতকে নির্মিত এই স্মশানেশ্বরীতি কালের সাক্ষী হয়ে আজ দাঁড়িয়ে আছে। সমাধিস্থলের পূর্বদিকে চিতা এখানেই রাজপরিবারের সদস্যদের শবদেহ সৎকার করা হতো যা চিলাই নদীর পাশেই অবস্থিত। চিতার পাশেই রাজ্ পরিবারের সদস্যেদের স্মৃতি সৌধ রয়েছে। স্মশান চত্বরে ১টি শিব মন্দির, ১টি কালী মন্দির, ১টি দূর্গা মন্দির রয়েছে। শিব মন্দিরের ভিতরের অবস্থাটা খুবই সেঁতসেঁতে।
সাহাবউদ্দিন আহম্মেদ ‘কিংবদন্তির সন্ন্যাসী রাজা ও ভাওয়াল রাজবাড়ি’ নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, ভাওয়ালের জমিদার জয়দেব নারায়ণের দৌহিত্র লোক নারায়ণ রায় বাংলা ১২৫০ থেকে ১২৬০ সালের মধ্যে গড়ে তোলেন এই ভাওয়াল শ্মশানেশ্বরী । তবে ঐতিহাসিকদের মতে, মূল শ্মশানের কাজে হাত দিয়েছিলেন রাজা কীর্তি নারায়ণ রায়।
তার শাসনামলেই প্রায় পাঁচ একর জমির ওপর ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী নির্মাণ করা হয়। প্রচলিত আছে, ভারতের পুরী থেকে বিখ্যাত স্থপতি কামাক্ষ্যা রায়কে নিয়ে আসা হয় ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী নির্মাণের জন্য। ছয়টি স্তম্ভবিশিষ্ট শিবমন্দিরটি নির্মাণে মোগল স্থাপত্যশৈলী অনুসরণ করা হয়েছে যার গায়ের অনিন্দ্য সুন্দর নকশাগুলো এখনো দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে। যদিও এর সৈন্দর্য আগের মতো নেই ধ্বংস হয়ে গেছে অনেক কিছুই। ভিউয়ার্স আপনারা দেখতে পাচ্ছেন দূর থেকে সব মন্দিরের গায়ে কত সুন্দর ফুলের কারুকাজ রয়েছে। এটা দেখে বুঝা যায় কতৎকালীন এই অঞ্চলের শিল্প-ঐতিহ্য কতটা সমৃদ্ধ ছিল। কারণ সমৃদ্ধ শিল্প না থাকলে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা গুলোর মধ্যে এতো সুন্দর কারুকাজ লক্ষ্য করা যেতোনা। কিন্তু এর ভেতরের সৈন্দর্য ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
সংরক্ষণের পরিকল্পিত ও কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় খসে পড়ছে স্তম্ভগুলোর গায়ের অনবদ্য সব কারুকাজ। অসাধারণ সব নকশাগুলো প্রায় মুছে যেতে বসেছে।
ধসে পড়ছে সকল ইট পাথর, খসে যাচ্ছে নকশাগুলো। দরজা জানালা একটাও আর অবশিষ্ট নেই। দর্শনার্থীদের জন্য পরে আছে শুধু এই স্তম্ভগুলোই। আর ভেতরের সেঁতসেঁতে পরিবেশ। কিন্তু বাহির থেকে এর সৈন্দর্য মোটেও ভাটা পড়েনি।
প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর দায়সারা ভাবে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়েই তাদের দায় সেরেছে। আগে অনেক দূর থেকেও মন্দিরের স্তম্ভগুলো দেখা যেত। কিন্তু শ্মশান চত্বরের আশপাশে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে ওঠায় দিন দিন চোখের আড়ালে পড়ে যাচ্ছে অনিন্দ সুন্দর স্থাপত্যশৈলী সমৃদ্ধ এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি ।
কিভাবে যাবেন
এখন আমি আপনাদের বলবো কিভাবে আপনারা এখানে আসবেন। ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সড়ক পথে ও রেলপথে গাজীপুর যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে গাজীপুরগামী বাসে শিববাড়ী নেমে রিকশায় চড়ে ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী আসা যায়। আবার ঢাকার মহাখালী থেকে ময়মনসিংহগামী বাসে উঠে গাজীপুর চৌরাস্তায় নেমে লোকাল বাস অথবা সিএনজি করে শিববাড়ি আসতে হবে। শিববাড়ী থেকে রিকশায় চড়ে ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী আসা যায়।
এছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা দেশের উত্তরাঞ্চলগামী ট্রেনে চড়ে জ্যাম এড়িয়ে সহজেই অল্প সময়ের মধ্যেই গাজীপুর আসা যায়। জয়দেপপুর স্টেশনে থামে এমন ট্রেনে উঠতে হবে। স্টেশনে নেমে রিকশা নিয়ে সহজেই চলে আসবে গাজীপুরের রাজ্ শসানেশ্বরীতে।
খরচ:
ঢাকার কাছে হওয়ায় অল্প সময়ে খুবই সুন্দর একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এখন আসি খরচের হিসেবে। ঢাকার মহাখালী থেকে গাজীপুর শিববাড়ি যাওয়া-আসা বাস ভাড়া ৪০+৪০ = ৮০ টাকা। শিববাড়ি থেকে স্মশানেশ্বরী বা শশান অটো রিকশা ভাড়া ১০ + ১০ = ২০ টাকা।
দুপুরের খাবার ২০০ টাকা, নাস্তা ও অন্নান্ন খরচ = ৩০ টাকা, মোট = ৩৩০ টাকা ।
আর যদি ট্রেনে যাতায়াত করেন তাহলে খরচের হিসাবটা হবে এইরকম.....
ঢাকার কমলাপুর থেকে জয়দেবপুর যাওয়া-আসা ট্রেন ভাড়া ২০+২০ = ৪০ টাকা। স্টেশন থেকে স্মশানেশ্বরী বা শশান অটো রিকশা ভাড়া ১০ + ১০ = ২০ টাকা, দুপুরের খাবার ২০০ টাকা, নাস্তা ও অন্নান্ন খরচ ৩০ টাকা, সর্বমোট খরচ হবে = ২৯০ টাকা
মোটামুটি একটু বেশি করে ধরলেও ৩৫০ টাকায় একদিনে খুব ভালো করে আপনি ভাওয়াল রাজ স্মশানেশ্বরী ঘুরে আস্তে পারবেন।
কোথায় থাকবেন
ঢাকার কাছে হওয়ায় দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা যায়। রাত্রিযাপনের জন্য গাজীপুরে অসংখ্য রিসোর্ট ও আবাসিক হোটেল রয়েছে। গাজীপুরের অবস্থিত উল্লেখযোগ্য রিসোর্টের মধ্যে ভাওয়াল রিসোর্ট, নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট, ছুটি রিসোর্ট, জল ও জঙ্গলের কাব্য, অঙ্গনা রিসোর্ট, দ্যা বেস ক্যাম্প বাংলাদেশ, সারাহ রিসোর্ট প্রভৃতি অন্যতম।
আরও পড়ুন
No comments